शनिवार, 1 अक्तूबर 2016

নিঃশব্দ ভালবাসা

সে অনেক কিছু বুঝতে পারে। আনেক কিছু চিন্তা করতে পারে। অনেক কিছু করতেও পারে। তবে সমস্যা একটাই, সে কথা বলতে পারেনা। বাবা-মা, দুই বোন ও এক ভাই নিয়ে তাদের সংসার। এই ছোট্ট চড়ুই পাখির মত পরিবারটিকে ও জান-প্রান দিয়ে ভালবাসে। দুনিয়াতে বন্ধু ও আপন বলতে আছেত ওরাই। সায়মার হৃদয়ের আকাশ ভরা স্বপ্ন, আদর-স্নেহ সবটুকু তার পরিবার ঘিরে। সপ্তম শ্রেণী পাশ করে অষ্টম শ্রেণীতে পা দিলেও আজও কোন বন্ধু বানাতে পারেনি ও। সহপাঠীদের বন্ধু বানাতে ও কি-না করেছে! হাতে বানানো কার্ড, কলম দিয়ে সহযোগিতা, হোম ওয়ার্ক দেখিয়ে ম্যাম এর হাত থেকে বাঁচানো…। তবে একটিতে সে ব্যর্থ হয়েছে, যে, সে ভাল কথাবাজ না। আসলে সেত কথাই বলতে পারেনা। পরীক্ষার সময় পেছন থেকে জিজ্ঞেস করলে ম্যাম এর চোখ ফাঁকি দিয়ে উত্তর বলে দিতে পারেনা। ক্লাসে মজার গল্প বলতে পারেনা। এজন্যই ওর বন্ধু টেকেনা। তবুও সে চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে। ঘরের মানুষ গুলোও ব্যাস্ত। ছোট বোনটা তার বই খাতা নষ্ট করলেও তার মমতা দিয়ে বোনটিকে ক্ষমা করে দেয়। ওর তিন বছরের ছোট বোনটি ওকে নাম ধরে ডাকে, তবু ও কিছু মনে করেনা। “সায়মা। এই সায়মা। অঙ্কটা বুঝিয়ে দেত।“ বোনের আদেশে মিটি মিটি হাসে সায়মা। খাতা আর কলমটা নিয়ে করে দেয় অঙ্ক। “আরে ধ্যাত! তোকে আমি অঙ্ক করতে বলেছি? অ্যা ? অঙ্কত আমিও মুখস্ত লিখতে পারি। বললাম বুঝাতে।“ “ওমা! একি আশ্চর্য কথা বলছে রাফা! সে যেন জানেনা আমি বোবা?!” বোনের মনের ভাব বুঝতে পেরে রাফা মুখ বাঁকায়। “ও……। ভুলেই গেছি। তুইত কথাই বলতে পারিসনা। তুই যে কেন আছিস! কোন কাজই করতে পারিসনা। ভাইয়া আমাকে একটু অঙ্কটা…।“ বলতে বলতে চলে যায় রাফা। সায়মার হালকা অভিমান হয়। “কে বলল, আমি কিছু পারিনা? আমি শুধু বলতে পারিনা। আর সবই তো পারি।“ ক্রিং ক্রিং ফোনটা বাজছে। কেও উঠাচ্ছেনা কেন? “ রাফা……। ভাইয়া……।“ চিৎকার করতে গিয়ে, ফোঁস ফোঁস শব্দ ছাড়া সায়মার মুখ দিয়ে আর কিছুই বের হলনা। ছোট বেলায় টনসিল খুব মারাত্মক হয়ে যাওয়ায় অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয় বাবা-মা। বাবার শিক্ষকতা পেশায় যতটুকু সম্ভব ছিল, এক কাঁচা প্রায় হাতুড়ে শ্রেণির এক চিকিৎসককে দিয়ে অপারেশনটা করানোর সময় টনসিলের সাথে সায়মার কণ্ঠনালীকেও মারাত্মক ভাবে ফুটো হয়ে যায়। আর চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় সায়মার কথা। অনেকে বলেছিল বিদেশে নিলে ভাল করা যাবে, কিন্তু তা-কি আর সাদ্ধে আছে? “ওহ! ফোনটা বেজেই চলছে। মা কোথায়?“ অতঃপর রিসিভারটা তুলে কানে ঠেকায়। “কি বলবো আমি? আমিতো কিছুই বলতে পারিনা।“ ওপাশ থেকে কেও একজন হ্যালো হ্যালো করছে। হটাৎ টান দিয়ে রিসিভারটা নিয়ে নিলেন মা। বেশ কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রেখে, ঠাশ করে করে একটা চড় লাগালেন সায়মার গালে। “তোকেনা বলেছি ফোন ধরতেনা? কথা বলতে পারিসনা, তবে ফোন ধরিস কেন? হ্যাঁ ?” কোন জবাব দেয়ার সামর্থ্য নেই ওর। তাই চুপ করেই থাকে। বারান্দায় দাড়াতেই শুনতে পায়। “ফাগুন অথবা আগুন, গাঙচিল মিষ্টি বাতাস, আমি সব কিছু বুঝি, তবু বলতে পারিনা, আবার এও সত্যি নয়, কখনো কিছু বলবনা……” পাশের ফ্ল্যাটে টিভি ছেড়েছে বোধয়। দীর্ঘ শ্বাসটা বুক চিঁরে অচানায়কই বেড়িয়ে পরে। এর পরই আবার, সমস্ত খারাপ আচরণ ভুলে ভালবাসতে থাকে পরিবারের মানুষদেরকে। কারণ এরা ছাড়াত তার কেও নেই। “ওমা! গাছের ডালে এটা কি ঝুলছে? ভাইয়ার সখের ঘড়িটা না?” বারান্দার গ্রিলের ফোঁকর গলিয়ে হাত বাড়িয়ে পাশের উঁচু গাছটার নিচু ডাল হতে বহু কষ্টে ঘড়িটা উদ্ধার করে। ভাইয়া বেশ কিছুদিন ধরে খুঁজে পাচ্ছেনা। এখন ওর হাতে দিলে সে যে কতটা খুশি হবে, তা ভেবেই একধরনের রোমান্স জাগে তার মাঝে। দৌরে ছুটে যায় ভাইয়ার রুমে। ভাইয়াকে কিছু বলা লাগেনা। সায়মার হাতে ঘড়িটা দেখে সঙ্গে সঙ্গে তা কেড়ে নিল লাবিব। “ও…। তুই-ই তাহলে এতদিন এটা লুকিয়ে রেখেছিস না?” “সেকি! ভাইয়া এসব কি বলছে?” সায়মার গালে জোরে একটা চড় মেরে ধাক্কা দিয়ে তাকে রুম থেকে বের করে দেয় লাবিব। প্রতিবাদ করতে পারেনা এবার ও সে। কারণ, সে বলতে পারেনা। অভিমানী অশ্রু ঝরে পরে তার শ্যামলা গাল বেয়ে। ভালবাসা এসে মুছে দেয় তা। সায়মা বিশ্বাস করে, যত খারাপ আচরণই করুকনা কেন, তার পরিবার মনে মনে তাকে খুবই ভালবাসে। তবে সমস্যা একটাই, এ ভালবাসার কথা কেও কাউকে বলতে পারেনা। যদিও অন্যরা কথা বলতে পারে, তবুও ওরা ভালবাসি বলতে পারেনা। “কিন্তু কেন? তারা কি এই শব্দটার জন্য আমার মত বোবা?” কলিংবেল এর শব্দে ওর ভাবনা ছুটল। বাবা এসেছে। আনন্দ ভরে ছুটে যায় বাবার কাছে। মুখ দিয়ে বলতে চায় “বাবা এসেছ?” কিন্তু কেমন গাধার মত অদ্ভুত ঘ্যা ঘ্যা ছাড়া কিছুই তার কণ্ঠ দিয়ে বের হয়না। “হাঃ হাঃ হাঃ” হাসিতে গড়িয়ে পরে লাবিব আর রাফা। “সায়মা। তোর গাধাটাকে খাবার দাবার কিছু দিসনা নাকি? রাত-দিন অতো চ্যাঁচ্যাঁয় কেন?” রাফার কোথায় প্রতিবাদ স্বরূপ ওর কণ্ঠ দিয়ে আবার ঘ্যা ঘ্যা আওয়াজ বের হয়। বাবা রেগে যায়। “এই! সারাদিন খালি ঝগড়া। একটা বোবা মেয়েকে নিয়ে তোরা এত চ্যাচাস কেন? বাইরেও চ্যাঁচামেচি, ঘরেও। ভাল্লাগেনা। জীবনটাকে লাথি মারি।“ গজ গজ করতে করতে ভেতরে যান তিনি। সবার চিন্তায় বাবার মাথা একটু হট থাকে। তা সবাই জানে। তাই কারোও গায়ে লাগেনা।তবে সায়মা রেগে যায়।“ যাহ্‌ আর এই বাসায় থাকবনা। যাদের এত ভালবাসি, তারা কেও আমাকে ভালবাসেনা।“ খোলা দরজা দিয়ে বেড়িয়ে গেল সে। “আরে! আরে! কোথায় যাচ্ছিস? মা দেখ। ভাইয়া যাওনা! ও কই যাচ্ছে?” রাফা চেঁচিয়ে ওঠে। লাবিব ছুটে যায়। সায়মা ৫ তালার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে থাকে। পেছনে তাকিয়ে দেখে লাবিব ও সিঁড়ি ভাঙ্গছে। আরও দ্রুত সিঁড়ি ভাংতে শুরু করে সায়মা। হটাৎ কিভাবে জানি সিঁড়ির দু-তিন ধাপে মা ফসকে পরে যায় সায়মা। কিছুক্ষন গড়াতে গড়াতে ওর পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে যায়। চোখ খুলতেই নিজেকে একটি সাদা সাদা রুমে সাদা বিছানায় আবিষ্কার করে সায়মা। ঘার ফিরিয়ে দেখে, তার দু পাশের দুটি বেডে রাফা ও লাবিব শুয়ে আছে। মাথার কাছে মা। তার কণ্ঠ সুন্তে পায় সায়মা। “তুই কেন ওভাবে ঘর থেকে দৌর দিলি মা? দেখ কিভাবে মাথা ঠুকে এক্সিডেন্ট করলি। তোর এতো রক্তক্ষরণ হল যে, লাবিব আর রাফা রক্ত দিতে গিয়ে কাহল হল। আল্লার মেহেরবানি যে তুই বেঁচেছিস। এখন তোর বাবা গেছে ঔষধ আনতে। অমন করলি ক্যান মা? আমাদের কষ্ট লাগেনা বুঝি?” মায়ের কথাগুলো কিসের যেন জট খুলে দিল। সায়মার চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। ওর রুদ্ধ কণ্ঠ মুক্ত হয়ে সজোরে বলতে চায়, “আমি শুনতে পেয়েছি। আমার পরিবার আমাকে বলছে, তারা আমাকে ভালবাসে। আমি জানলাম। তবে, খুব নিঃশব্দে।।”

कोई टिप्पणी नहीं:

एक टिप्पणी भेजें