शुक्रवार, 3 जून 2016

এক বিকেলের চিঠি


(১)
উড়ো পাতার মেঘের ভাজে পুরে, আমি একদিন কি ভেবে
আমার গল্পগুলোকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম তার কাছে।
গল্পগুলো ঠিক গল্প নয়, জানো তো... নিতান্তই দৈনন্দিন
টুকিটাকি। এই তো সেদিন, আলগোছে পাতা উল্টিয়ে
দেখি, এক কোণে লিখে রেখেছি সেদিনকার বাজার দর।
কুচো চিংড়ি আধসের ১০০ টাকা! কুচো চিংড়ির দরদাম
জেনে সে কি করবে এটা কিছুতেই মাথায় আসে নি! কি
জানি কি সব আবোল তাবোল লিখি!
তবে চিঠিগুলো কিন্তু তাকেই লেখা। এই যেমন ধরো
বিকেল বেলায় অলস বিছানায় গা এলিয়ে বসে থাকতে
থাকতে লিখে ফেলেছি দু'কলম! মাঝে মাঝে গভীর
রাত্তিরে ঘুম ভেঙে চোখ কচলাতে কচলাতে লিখেছি,
"আজকের চাঁদটা মারকুটে ধরণের সুন্দর!" তারপর ওই যে ঐ
দিন, যেদিন সবাই দোর বেঁধে কোথায় যেনো গেলো!
সেদিন লিখেছিলাম নিষিদ্ধ চিঠি। দুয়ার বন্ধ রেখে
লুকোচুরি খেলার গল্প! পেছনের চিঠি আমার আবার
উল্টেপাল্টে পড়ার অভ্যেস! মাঝে মাঝে নিজেই বুঝে
উঠতে পারি না, হতচ্ছাড়া কথাগুলো কেন লিখেছিলাম,
কি ভেবে এতো মান-অভিমান, উচ্ছ্বাস... মাঝে মাঝে
ঝগড়া! সবটাই একপক্ষীয়, ছেলে মানুষী! আয়নার সামনে
দাঁড়িয়ে নাটকের পার্ট মুখস্থ করার মতো। কেউ দেখছে
না, জানছে না... পুরোটাই ন্যাকামো। অথচ লেখার সময়
এসব কিন্তু একদম মাথায় আসে না! বরং মনে হয়, এই
কথাগুলো তাকে না বললে চলবে? আমি বাঁচবো, লুকিয়ে
রেখে??
সেই চিঠিগুলো একদিন আমি য়্যাত্ত বড়ো এক খাকি
রঙের খামে পুরে পাঠিয়ে দিলাম। পাঠানোর আগে মন
খচখচ করছিলো। এইসব লেখালেখি, সে যদি না বোঝে?
যদি বোকা বোকা ভাবে? এলোমেলোই তো সব। কোন
পুকুরে গা ডোবানো হলো, কবে কখন মেঘ হয়েছিলো,
মায়ের ঘুমের সুযোগে পেটরা ভেঙে টাকা চুরি করে
প্রজাপতি কিনেছিলাম, এইসব কি বলার মতো?
এলোমেলো নয়? তবু সাহস করে পাঠিয়ে দিলাম। কি আর
হবে? বড়োজোর ধুত্তোরি ফালতু... বলে ছুড়ে ফেলে
দেবে! তাতেই বা আমার কি? আমি তো সেটা দেখছি না!
তবে হ্যা। দেখলে খানিকটা কষ্ট পেতাম বৈকী! কত কত
কালি ফুরিয়ে, মন কুড়িয়ে খুঁজে আনা শব্দ! একটুও কি
লাগতো না?? তাই পোষ্ট বাক্সই সই। পাঠিয়ে দিলাম। সে
যেয়ে পৌছে যাবে জায়গামতন।
ভাবছো হয়তো, খাকি কেন? খামের রঙ রঙিন কেন নয়??
না বাবা! আমার লেখার এতো রংধনু রঙ, খামখানা বরং
বিবর্ণই থাকুক। লেখা ফেলে খাম ছুঁয়ে বসে থাকলে
চলবে?? আমার অবশ্য উত্তর চাইনা। এক দেয়ালের চিঠি
তো! পাঠিয়েই ভুলে গেছি। নাহ, ভুলিনি অবশ্য, তাহলে
তোমায় বলতাম কি করে?? তবে হুম, উত্তরের প্রত্যাশা না
করা চিঠি, ভুলে যাওয়াই সুবিধা জনক।
যাই হোক। এই চিঠি চিঠি করে প্যাচাচ্ছি তখন থেকে।
চিঠি না কিন্তু ঠিক, দৈনন্দিন টুকিটাকি...
(২)
গল্পগুলো পাঠিয়ে দিয়ে স্বস্তিতে নেই একদম। রোজ মনে
হয়, খুব ভুল হয়ে গেছে! বাস থেকে নেমে প্রতিদিন পোষ্ট
অফিসের দরজায় দাঁড়িয়ে ভাবি, আজ একটু খোঁজ নিয়ে
আসি। হয়তো ওরা পাঠাতে ভুলে গেছে! একগাদা ফাইল,
কাগজের তোড়ায় হয়তো এলোমেলো পড়ে আছে আমার
গল্প গুলো! টুক করে তুলে ব্যাগে পুরে ফেরত নিয়ে আসবো
তবে। ভয় হয় যে খুব! হতচ্ছাড়া শব্দগুলো যদি বেঈমানী
করে? মানুষটা যদি ভুল বোঝে? যদি সামান্য খানিকটা
বুঝে বাকিটা উলটো করে ভেবে নেয়? যদি অবজ্ঞার
হাসি হাসে?? বন্ধুদের আড্ডায় চেঁচিয়ে পড়ে বলে, "দেখ
দেখ... কি লিখেছে বুদ্ধুটা! নীল দেয়ালের ঘরে নাকি
লাল-সাদার সুখ! হাহাহা, কাব্যিক, আতেল। চোখ খুলেই
ভুলভাল স্বপ্ন দেখে! সুখ আবার কি রে? কই পাওয়া যায়?
দাম কতো? এতো স্বপ্ন দেখাদেখি? ছ্যাহ, পাগল!!"
কি করে সইবো, আমি? তারচেয়ে আমার কাছেই থাকতো
ওরা... যত্নে, গোপনে!
আবার লোভও তো হয়! হয়তো সে খুব করে হাসবে, বোকা
বোকা হাসি। তারপর ফিরতি ট্রেনেই রওনা দেবে...
হাতভর্তি কাঁঠালচাপা নিয়ে! আমার ছোট্ট ঘরটা সেই
অদ্ভুত সুবাসে মৌ মৌ করবে। খুব, খুব, খু-ব করে বকুনী
খেয়ে নাক চোখের জলে হাবুডুবু খাবো। তারপর ভোর ছুঁই
ছুঁই রাতে দূর থেকে হাসির শব্দও শুনবে কেউ কেউ! কত
কিছুই তো ঘটে... নভেলে, মুভিতে! আমার গল্পগুলোর
স্ক্রিপ্ট এর শেষ পাতায় হয়তো মিলনাত্মক সমাপ্তি
লেখা আছে... হতে পারে না??
উফ কি লোভী, নচ্ছার, পাজী আমি!! না??
চিঠিগুলো... উফ আবার সেই একই ভুলভাল বকছি। চিঠি না
তো... দৈনন্দিন টু্কিটাকি...
(৩)
অনেকগুলো দিন ফুরিয়ে গেছে। কিছু জবাব আসে নি।
ভীষণ বোকা লাগে নিজেকে। তবে কি সে এড়িয়েই
গেলো পুরোটুকু। হেসে ছুঁড়েই দিলো? হতে পারে। কিইবা
ছিলো, ওতে? দুটো বকুলের মালা... তাও শুকিয়ে কাঠ।
একটা গোলাপ পাপড়ি, হয়তো মাঝখান থেকে ভেঙে
গেছে পাপড়ি টা। আর টুপ করে ঝরে যাওয়া দুফোটা
চোখের জল। সে তো সামান্য কিছুটা লেখা লেপ্টে
দিয়ে শুষে নিয়েছে কাগজের ভাঁজ।
আবার একটু করে হতচ্ছাড়া মনটা বলে ওঠে, "আরে, পোষ্ট
বক্সে কি বিশ্বাস আছে আজকাল? হয়তো ওরা গরিমসী
করে মাস পার করে দিচ্ছে! দেখো গিয়ে, পিওন ব্যাটা
ছুটিতে গেছে। ফিরলেই ক্রিং ক্রিং সাইকেলে
গল্পগুলো পৌছে দেবে ঠিক মানুষটার হাতে। আরো
খানিকটা ধৈর্য্য ধরো! এতো অস্থির হলে চলে??"
বলছি অবশ্য গল্প। আসলে কিন্তু দৈনন্দিন টুকিটাকি...
(৪)
খামটা ফেরত এসেছে আজ বিকেলে। প্রাপকের
ঠিকানায় নাকি কেউ আজকাল আর থাকে না। চিঠিটার
আঠা খোলা হয় নি, একদম অমনি আছে। ঠিক যেমনটা
আমি লাল বাক্সটায় ফেলেছিলাম। উফ... কি ভুলো মন
আমার... আবার চিঠি বলছি। এ কি চিঠি?? এ আমার
জীবন। খাকি রঙের বিবর্ণ খামে... আমার পুরোটুকু জীবন।
---লিখেছেন - তৃপ্ত সুপ্ত

कोई टिप्पणी नहीं:

एक टिप्पणी भेजें